স্মার্ট হোম কাকে বলে - স্মার্ট হোম এর সুবিধা

স্মার্ট হোমে হোম অটোমেশন সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে সবার ব্যস্ততা বেশি। তাই একটি স্মার্ট হোম সবার জীবনে আরাম বৃদ্ধি করে, সময় বাঁচিয়ে দেয়। চলুন স্মার্ট হোম কাকে বলে - স্মার্ট হোম এর সুবিধা সম্পর্কে জেনে নিই।

স্মার্ট হোম কি?

যেমন স্মার্টফোন,স্মার্ট টিভি রয়েছে তেমনি একটি অভিনব আবিষ্কার স্মার্ট হোম। বিশ্বের সব কিছুই এখন প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে গেছে। তাই বাড়িঘরের যাবতীয় জিনিসপত্র যদি স্মার্ট ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে বিষয়টা মন্দ হবে না। আর এই ধারণা থেকে স্মার্ট হোমের সৃষ্টি।

বিভিন্ন ডিভাইস ও সফটওয়্যার এর সমন্বয়ে হোম অটোমেশন সিস্টেম গঠিত। এখানে থাকার সব যন্ত্রপাতি ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত এবং কেন্দ্রীয় সার্ভার থেকে নিয়ন্ত্রিত। বাসা বাড়িতে হোম অটোমেশন সিস্টেম ব্যবহার করা হলে তাকে স্মার্ট হোম বলে।

স্মার্ট হোম কাকে বলে?

বিভিন্ন ডিভাইস ও সফটওয়্যার এর সমন্বয়ে হোম অটোমেশন সিস্টেম গঠিত। এখানে থাকার সব যন্ত্রপাতি ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত এবং কেন্দ্রীয় সার্ভার থেকে নিয়ন্ত্রিত। বাসা বাড়িতে হোম অটোমেশন সিস্টেম ব্যবহার করা হলে তাকে স্মার্ট হোম বলে।

আপনার বাড়ি একটি স্মার্ট হোম হলে আপনি পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে বাড়ির ডিভাইস গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। হোম অটোমেশন সিস্টেম ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে আপনি বাসার দরজা লোক অথবা খুলতে পারবেন, বাসার সিকিউরিটি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। স্মার্ট হোম কাকে বলে আশা করি বুঝতে পেরেছেন।

স্মার্ট হোম এর সুবিধা:

স্মার্ট হমে সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এখানে শক্তি ব্যয়ের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। স্মার্ট হোমের প্রধান সুবিধা হলো: পৃথীবির যেকোন প্রান্তে বসে বাসা বাড়ির প্রত্যেকটি সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রণ করা যায়। স্মার্ট হোম এর সুবিধা গুলো নিম্নরূপ:

১. স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ যোগ্য:

স্মার্ট হোম এ সবকিছু স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ যোগ্য। অর্থাৎ হোম অটোমেশন সিস্টেম ব্যবহার করে আপনি মোবাইলের সফটওয়্যার এবং ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। যেমন: আলো, ফ্যান, লাইট চালু অথবা বন্ধ। এইগুলো মোবাইল অ্যাপ বা ভয়েস কমান্ড দিয়ে করে সম্ভব।

২. শক্তির ব্যবহার কমাতে পারে:

স্মার্ট হোম শক্তির ব্যবহার কমাতে পারে। যেমন: আপনি দুর থেকে মোবাইলের সফটওয়্যার এবং ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। যেমন: আলো, ফ্যান, লাইট চালু অথবা বন্ধ। এইগুলো মোবাইল অ্যাপ বা ভয়েস কমান্ড দিয়ে করে সম্ভব। অর্থাৎ, আগে যে অপচয় হতো এখন আর সেটা হবে না এইভাবে শক্তি কম ব্যবহূত হবে।

৩. ঘর বাড়ির সুরক্ষা নিশ্চিত করে:

স্মার্ট হোম ঘর বাড়ির সুরক্ষা নিশ্চিত করে। স্মার্ট হোম এ স্মার্ট লোক সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। যার ফলে সহজে চোর, ডাকাত হামলা করতে পারে না। স্মার্ট লোক গুলোতে এলার্ম সিস্টেম থাকাই সিকিউরিটি ব্যবস্থা আরো জোরদার হয়।

৪. দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়:

একটি স্মার্ট হোমে সব কিছু দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যা খুবই সুবিধার। সফটওয়্যার, ইন্টারনেট সংযোগ,স্মার্ট ডিভাইস থাকলেই পৃথিবীতে কোন প্রান্তে থেকে আপনি ঘরবাড়ি ডিভাইস গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

৫. আরামদায়ক জীবন নিশ্চিত করে:

স্মার্ট হোমে হোম অটোমেশন সিস্টেম ব্যবহার করা হয়। যা আরামদায়ক জীবন নিশ্চিত করে। সব কিছু ভয়েস কন্ট্রোলার ব্যবহার করে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। মোশন সেন্সর ব্যবহার করে অটোমেটিক লাইট, ফ্যান, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমরা চাই সব কাজ যেনো আপনা আপনিই হয়। স্মার্ট হোম আমাদের সেই সুযোগ সুবিধা প্রদান করেছে যার ফলে আমাদের জীবন আরও আরাম দায়ক হয়ে উঠেছে।

৬. সময় বাঁচায়:

স্মার্ট হোমে রুটিনের মতোই আগে থেকে অনেক কিছু সেট করা যায়। যেমন: কখন এলার্ম বাজবে, কখন কফি তৈরি হবে ইত্যাদি। যার ফলে আমাদের অনেক কাজ দ্রুত হতে যায়। এইভাবেই স্মার্ট হোম আমাদের সময় বাঁচায়।

স্মার্ট হোম এর অসুবিধা:

স্মার্ট হোম এর সুবিধা বেশি বলেই যে এর অসুবিধা নেই এমনটা নয়। স্মার্ট হোম এর অসুবিধা ও আছে। চলুন এবার স্মার্ট হোম এর অসুবিধা গুলো জেনে নেওয়া যাক:
  • স্মার্ট ডিভাইস গুলো ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকে। যার ফলে এগুলো হ্যাক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
  • স্মার্ট হোম তৈরি করতে অনেক বেশি খরচ করতে হয়। সাধারণ বাড়ি তৈরির তুলনায় প্রায় তিনগুণ বেশি খরচ করতে হয়।
  • প্রতিটি ডিভাইস গুলো সফটওয়্যার, বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট নির্ভর। এই তিনটির মধ্যে যে কোন একটি নষ্ট হয়ে গেলে ডিভাইস গুলো অকেজো হয়ে যায়
  • স্মার্ট হোম পরিচালনা করার জন্য আপনার দক্ষতা থাকতে হবে। প্রযুক্তিগত জ্ঞান না থাকলে আপনি স্মার্ট হোমের ডিভাইস গুলো পরিচালনা করতে পারবেন না।
  • বিভিন্ন ডাটা চুরির সম্ভাবনা বেশি।
  • স্মার্টফোনের সেট আপ অত্যন্ত জটিল। এই সম্পর্কে গভীর জ্ঞান না থাকলে আপনার স্মার্ট হোম এড়িয়ে চলা উচিত।

স্মার্ট হোমের সেবাসমূহ: 

স্মার্ট হোমের সেবা সমুহ জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। স্মার্ট হোমের সেবাসমূহ নিম্নরূপ: 

স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট (Smart thermostat):

স্মার্ট হোম এ স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট ব্যবহার করা হয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য । ওয়াইফাই বা অন্য কোন নেটওয়ার্কের সাথে আপনার ব্যবহৃত স্মার্ট ফোন বা স্মার্ট ডিভাইস এর সাথে স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট যুক্ত করে রাখতে পারেন। আপনি স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট স্বয়ংক্রিয়ভাবে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন কারণ থার্মোস্ট্যাট নিয়ন্ত্রণের অ্যাপ রয়েছে।

স্মার্ট হোম অ্যাসিস্ট্যান্ট (Smart home assistant):

একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যা আপনার আদেশ অনুযায়ী আপনার বাড়ির প্রত্যেকটি ডিভাইসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এটি হলো স্মার্ট হোম অ্যাসিস্ট্যান্ট। ঘরের অ্যাক্সেসরিজ গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন ভয়েস কমান্ড ব্যবহার করে। লাইট অন, লাইট অফ করা সম্ভব ভয়েস কন্ট্রোলার এর মাধ্যমে। আপনার বাড়িতে কোন রকম অস্বাভাবিক কার্যকলাপ ঘটলে তা আপনাকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এলার্ট করে থাকে এটিই হলো স্মার্ট হোম অ্যাসিস্ট্যান্ট এর অন্যতম সুবিধা।

স্মার্ট লাইটিং (Smart lighting):

স্মার্ট লাইটিং যা একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। দূর থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে একজন ব্যক্তি লাইট নিয়ন্ত্রণ করতে পারে স্মার্ট লাইটিং এর মাধ্যমে। ইন্টারনেটের বা wifi er সাথে থাকে সরাসরি স্মার্ট লাইটিং সংযুক্ত থাকে। google assistant, অ্যামাজন এর অ্যালেক্সা এর মাধ্যমে ভয়েস কমান্ডার মাধমে আপনি স্মার্ট লাইটিং নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।আলো আপনার যখন যেমন প্রয়োজন সে অনুযায়ী পরিবর্তন করে নিতে পারবেন স্মার্ট লাইটিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে।

স্মার্ট এনার্জি ম্যানেজমেন্ট (Smart Energy Management):

বিভিন্ন সেন্সর, সফটওয়্যার এবং অ্যালগরিদম ব্যবহার করে শিল্প কারখানা, বাসা বাড়ি এবং গাড়ির শক্তি ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণ করতে সমর্থ হওয়ার প্রক্রিয়াকে স্মার্ট এনার্জি ম্যানেজমেন্ট বলে। শক্তি ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণ এবং শক্তিকে অপটিমাইজ করতে সাহায্য করে স্মার্ট এনার্জি ম্যানেজমেন্ট।

স্মার্ট ইরিগেশন (Smart irrigation):

আপনি আপনার বাসা বাড়িতে থাকা গাছপালা বা বাগানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি দিতে পারবেন স্মার্ট ইরিগেশন এর মাধ্যমে। আপনি আপনার মাটির আদ্রতা, আবহাওয়া এবং গাছের ভিন্নতার উপর ভিত্তি করে পানি কতটুকু দিতে হবে এবং কখন দিতে হবে তা নির্ধারণ করে রাখতে পারবেন স্মার্ট ইরিগেশন এর মাধ্যমে। পানির অপচয় রোধ হবে, গাছগুলো পরিমান অনুযায়ী পানি পাবে এটি স্মার্ট ইরিগেশন এর সবচেয়ে বড় সুবিধা।

স্মার্ট অ্যাপ্লায়েন্স (Smart Appliances):

স্মার্ট ফ্রিজ, স্মার্ট ওভেন, স্মার্ট ওয়াশিং মেশিন, স্মার্ট লাইট ইত্যাদি স্মার্ট অ্যাপ্লায়েন্স এর অন্তর্ভুক্ত যন্ত্রপাতি। আপনি যদি স্মার্ট অ্যাপ্লায়েন্স ব্যবহার করেন তাহলে আপনার বিদ্যুৎ খরচ কিছুটা কমবে, বাড়ি সুরক্ষিত থাকবে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে সব কাজ করা যাবে এবং সময় বাঁচবে।

স্মার্ট হোম সেটআপ

স্মার্ট হোম সেটআপ এর জন্য স্মার্ট ডিভাইস এবং এক্সেসরিজ খুবই জরুরীএবং প্রয়োজনীয়। স্মার্ট হোম সেটআপ এর জন্য‌ যেসব ডিভাইস প্রয়োজন তা নিয়ে নিম্নরূপ। স্মার্ট হোম সেটআপ করার জন্য সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো:
স্মার্ট লাইট: অটোমেটিক আলো নিয়ন্ত্রণের জন্য
স্মার্ট থার্মোস্ট্যাট: অটোমেটিক ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য
ভয়েস কন্ট্রোলার: ভয়েস কমান্ড এর সাহায্যে কাজ করার জন্য
স্মার্ট ক্যামেরা: ঘরে সার্বিক নিরাপত্তা প্রদান করার জন্য
স্মার্ট প্লাগ : যেকোনো ডিভাইস স্মার্ট করার জন্য
স্মার্ট ডোর বেল: অতিথিদের সহজে রিকগনাইজ করার জন্য
স্মার্ট লক: ঘরের মেইন ফটক নিরাপদ রাখার জন্য
smart ব্লাইন্ডস: ঘরের আলো নিয়ন্ত্রণের জন্য

স্মার্ট হোম তৈরি করার জন্য বিভিন্ন রকম খরচ হতে পারে। যেমন:
প্রাথমিক স্তরে: খরচ হতে পারে $১০০-$৫০০
মধ্যম স্তরে: খরচ হতে পারে $৫০০-$২০০০
সর্বোচ্চ স্তরে: খরচ হতে পারে $২০০০+;
অর্থাৎ,মিডিয়াম রেঞ্জ থেকে শুরু করে হাই কোয়ালিটির যন্ত্রপাতি দিয়ে স্মার্ট হোম সাজানো যায়। আপনি চাইলে এক্ষেত্রে বেসিক কিছু ডিভাইস কিনে স্মার্ট হোম শুরু করতে পারেন। আবার আপনার সামর্থ্য থাকলে বেস্ট ডিভাইস গুলো কিনে আপনি স্মার্ট হোম তৈরি করতে পারেন।

স্মার্ট হোম সম্পর্কে FAQs

১) প্রশ্ন: স্মার্ট হোম কিভাবে কাজ করে?
উত্তর: IoT (Internet of Things), Smart প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্মার্ট হোম কাজ করে।

২) প্রশ্ন: কোন ভয়েস কন্ট্রোলার সবচেয়ে জনপ্রিয়?
উত্তর: Google Assistant, Amazon Alexa, Apple Siri ভয়েস কন্ট্রোলার গুলো সবচেয়ে জনপ্রিয়।

৩) প্রশ্ন: স্মার্ট হোম তৈরিতে কতো খরচ হয়?
উত্তর: স্মার্ট হোম তৈরিতে কতো খরচ হবে তা আপনার পছন্দ, আপনার ব্যবহৃত ডিভাইস এর উপর নির্ভরশীল।

লেখক এর শেষ বক্তব্য

এর পাশাপাশি এই আর্টিকেলে স্মার্ট হোম কাকে বলে, স্মার্ট হোম কি, স্মার্ট হোম সেটআপ, স্মার্ট হোম এর সুবিধা - অসুবিধা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে ভবিষ্যতে প্রতিটি বাড়ি হবে একটি স্মার্ট হোম।

আর্টিকেল তো ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। হোম অটোমেশন বা স্মার্ট হোম নিয়ে আরো কিছু জানার থাকলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ, আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

আপনি হেবি স্পিচ ব্লগারে নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url